শেখ হাসিনার রায়কে মানবাধিকারবিরোধী আখ্যা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের
- আপলোড সময় : ১৯-১১-২০২৫ ০৩:৩৬:০৭ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৯-১১-২০২৫ ০৩:৩৬:০৭ অপরাহ্ন
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে অনুপস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এই রায়কে মানবাধিকারবিরোধী বলে আখ্যা দিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন- অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এক বিবৃতিতে সংস্থাটির সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাগনেস কালামার্ড বলেছেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্রনেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের সময় যে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, তার জন্য দায়ীদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত। তবে তা অবশ্যই নিরপেক্ষ ও ন্যায়সংগত বিচার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হতে হবে। ভুক্তভোগীরা ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা চান। কিন্তু মৃত্যুদণ্ড মানবাধিকার লঙ্ঘনকে আরও বাড়িয়ে দেয়। এটি সবচেয়ে নিষ্ঠুর, অমানবিক ও অপমানজনক শাস্তি-যা কোনো বিচার প্রক্রিয়ায় গ্রহণযোগ্য হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। বিবৃতিতে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই- আগস্টের মধ্যে ১,৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। হাজারো মানুষ আহত হয়েছে। বেঁচে থাকা ভুক্তভোগী ও নিহতদের পরিবারের জন্য সম্পূর্ণ স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডসম্মত বিচার প্রক্রিয়ায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু এই বিচার এমন এক আদালতে হয়েছে, যাকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল দীর্ঘদিন ধরে স্বাধীনতার অভাব ও অন্যায্য বিচার কার্যক্রমের অভিযোগে সমালোচনা করছে। তাছাড়া, অনুপস্থিতিতে বিচার ও দ্রুত রায় ন্যায্য বিচারের বিষয়ে গুরুতর প্রশ্ন তোলে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, যদিও শেখ হাসিনার পক্ষে আদালত-নিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন, কিন্তু যথাযথভাবে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়নি। আরও অভিযোগ আছে যে, বিরোধপূর্ণ প্রমাণ নিয়ে প্রতিরক্ষার জেরা করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। এতে বিচার প্রক্রিয়ার ন্যায়পরায়ণতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এটি ন্যায়সংগত বিচার প্রক্রিয়া না। ২০২৪ সালের জুলাইয়ের ভুক্তভোগীরা এর চেয়ে ন্যায়বিচারের দাবিদার। বাংলাদেশে এমন এক বিচার প্রক্রিয়ার প্রয়োজন যা সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ও পক্ষপাতহীন এবং যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমাধানের নামে আর কোনো লঙ্ঘন সৃষ্টি করবে না। কেবল তখনই সত্য, ন্যায়বিচার এবং ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল পুনর্ব্যক্ত করেছে যে, তারা সব পরিস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ডের সম্পূর্ণ বিরোধী-অপরাধ, ব্যক্তি বা প্রেক্ষাপট যাই হোক না কেন। উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিক্ষোভ শুরু হয়। আন্দোলনকারীরা মনে করেন, এটি ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের সুবিধা দেয়। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর বেআইনি শক্তি ব্যবহারের পর আন্দোলন আরও তীব্র হয়, এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবি ওঠে। প্রাণঘাতী সহিংসতার পর শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করেন, এবং জুন মাসে তার বিরুদ্ধে, সরকারের অন্যান্য সদস্য ও নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠন করা হয়। গত বছর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ছাত্রনেতৃত্বাধীন কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময়কার সহিংসতা ও দমন-পীড়নের দলিলপ্রমাণ সংগ্রহ করে। ভিডিও যাচাইকরণ সিরিজে ছাত্র বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী ও কম প্রাণঘাতী উভয় ধরনের অস্ত্রের বেআইনি ব্যবহারের প্রমাণ উপস্থাপন করেছে সংস্থাটি। সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন (তিন অভিযুক্তের একজন) রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী হন। তিনি দোষ স্বীকার করেন এবং সরাসরি বিচার শেষে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড পান। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বহুবার বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে রাজনৈতিক প্রভাবাধীন বিচার ও পদ্ধতিগত অন্যায় বিচারের সমালোচনা করেছে, যার মধ্যে মৃত্যুদণ্ডের চাপ এবং সমালোচকদের বিরুদ্ধে অবমাননা মামলার ঘটনাও রয়েছে (২০১৩ সালের বিবৃতি, ২০১৪ সালের বিবৃতি)।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
স্টাফ রিপোর্টার